গণতন্ত্রী পার্টি
১৯৯০ সালের ৩০ আগস্ট ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির বিশেষ সম্মেলনে সাম্য, স্বাধীনতা, গণতন্ত্রের আদর্শে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক, সমতাভিত্তিক, শোষণমুক্ত, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য পুনব্যক্ত করে পার্টির নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ফলে ৩১ আগস্ট, ১৯৯০ তারিখে সমমনা দল ও ব্যক্তিবর্ণের সমন্বয়ে গণতন্ত্রী পার্টি গঠিত হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৫৭ সালের ২৭ জুলাই ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) স্বাধীকারকামী গণতান্ত্রিক প্রগতিশীল দল হিসেবে তৎকালীন পাকিস্তানে প্রতিষ্ঠিত হয়। মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী পার্টির প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৯৫৭ সাল থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পর্যন্ত দেশের সকল গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশগ্রহণ করে ন্যাপ। মাঝে ১৯৬৭ সালে পার্টি নেতৃত্বের একাংশের কারণে পার্টি দ্বিধাবিভক্ত হয়। ১৯৬৮ সালে সঠিক রাজনীতি নিয়ে অগ্রসরমান পার্টির মূল স্রোত অধ্যাপক মোজাফ্ফর আহমদকে সভাপতি ও সৈয়দ আলতাফ হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গঠন হয়।
সামরিক স্বৈরাচার-বিরোধী ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি স্বাধীকার ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম সংগঠিত করে এবং ৬ দফা সম্বলিত ১১ দফা কর্মসূচীভিত্তিক গণঅভ্য্থুানকে সফল পরিণতির দিকে অগ্রসর করে নেওয়ার ক্ষেত্রে গুরুতৃপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি গৌরবজনক আবদান রাখে। এফ.এফ. নিয়মিত বাহিনী এবং “ন্যাপ”, কমিউনিষ্ট পার্টি, ছাত্র ইউনিয়নের সমর্থক মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে।
বিজয়ের পর স্বাধীন বাংলাদেশে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি সর্ববৃহৎ বিরোধী দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। স্বাধীনতার সুফল প্রতিটি মানুষের কাছে পৌছে দেয়ার লক্ষ্যে অবিচল ও সংকল্পবদ্ধ পার্টি জনগণের আস্থা অর্জন করে। কিন্তু পরবর্তিতে পার্টির নেতৃত্বের একাংশের কারণে জনগণের মাঝে এই অবস্থা ধরে রাখা সম্ভব হয় নাই। ফলে ১৯৭৯ সালে ভাঙ্গনের পথে ঠেলে দেয়।
১৯৮৬ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, একতা পার্টি ও ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (মোজাফ্ফর) এর একাংশ মিলে সৈয়দ আলতাফ হোসেন, পীর হবিবুর রহমান ও চৌধুরী হারুনুর রশিদকে আহ্বায়ক করে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ঐক্য ‘ন্যাপ’) গঠন হয়।
পরবর্তিতে ১৯৮৭ সালে দুই ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির পুনঃএকত্রিকরণ হয় এবং ১৯৯০ সালে গণতন্ত্রী পার্টি নামে আত্মপ্রকাশ করে। গণতন্ত্রী পার্টি নামীয় দলের প্রথম সভাপতি সৈয়দ আলতাফ হোসেন প্রথম সাধারন সম্পাদক আজিজুল ইসলাম খান।
গণতন্ত্রী পার্টি ১৫ দলীয় জোটে শরিক থেকে এক্যবদ্ধভাবে গণসংগ্রাম সংগঠিত করে স্বৈরাচারের পতন ত্বরান্বিত করে। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরীক দল হিসেবে গণতন্ত্রী পার্টি সরকার গঠনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে সহযোগিতা করে এবং টানা ৪ বার সরকার গঠনে শরীক দল হিসেবে ভূমিকা রাখে।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারী নির্বাচনে গণতন্ত্রী পার্টি দলীয় প্রতীক কবুতর মার্কায় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। পার্টির দ্বীগ্রুপের দ্বন্দের কারণে ১২ ডিসেম্বর, ২০২৩ তারিখে গণতন্ত্রী পার্টির বৈধ সকল প্রার্থীদের মনোনয়ন বাতিল হলে গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্যারিষ্টার আরশ আলী, নির্বাহী সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. শহীদুল্লাহ শিকদার, সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাড.ভূপেন্দ্র ভৌমিক দোলন সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের রায়ে ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৩ তারিখে নির্বাচন কমিশন থেকে প্রতীক নিয়ে নির্বাাচনে অংশ গ্রহণ করে বিপুল ভোটে জনগনের সমর্থন অজন করে।